নিজ বিশ্ববিদ্যালয় গেটেই ঝালমুড়ি বিক্রি করেন আব্বাস
সব বাকি বন্ধু-বান্ধবরা যখন আড্ডা এবং ঘুরাঘুরিতে ব্যস্ত তখন নিজের বিশ্ববিদ্যালয় গেটে ঝালমুড়ি বিক্রি করে আব্বাস। এর মধ্যে দিয়ে সে আবারো প্রমাণ করে দিল কোন কাজই ছোট নয় । প্রয়োজন শুধু সাহস আর আন্তরিকতা।
ক্লাস শেষ!
সহপাঠী বন্ধুরা সব মেতে উঠেছে আড্ডায়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্বাস উদ্দিনের সেই সময় নেই। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটেই ঝাল মুড়ির দোকান খুলে বসেছেন তিনি। ১৪ বছর বয়সে বাবা হারানোর পর থেকে এই শিক্ষার্থীর জীবন কেটে যাচ্ছে আর্থিক সংকটে। কখনো নির্মাণ শ্রমিক ,আবার কখনো দর্জির কাজ করে পরিবারের হাল ধরেছেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট আব্বাস। ভাই আক্কাস ও বোন ফাতেমার বিয়ের পর মা শাহানারা বেগমকে নিয়ে একাই পরিবারের ভার মাথায় নিতে হয় তাকে । তবে আর্থিক সংকট বাধা হতে পারেনি পড়ালেখায় । নিজ চেষ্টায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে সে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও থেমে নেই তার জীবন যুদ্ধ। ক্লাস শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঝাল মুড়ির দোকান নিয়ে বসে পড়েন আব্বাস। পড়ালেখার পাশাপাশি ঝাল মুড়ি বিক্রি করে নিজের ও সংসার চালাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আব্বাস- অনেক কিছু চাইছিলাম আমি শুরু করব । মানে আমি এই জিনিসটা শুরু করতে পারি ,ওই জিনিসটা শুরু করতে পারি, চায়ের দোকান দিতে পারি । মানে এই ধরনের অনেক কিছু চিন্তা করছি। চিন্তা করার পর আমার যে পুঁজি আছে ঐ অ্যামাউন্টটা দিয়ে কোন কিছু শুরু করতে পারছিলাম না । তো ভাবছি আমি ঝাল মুড়ি শপটা শুরু করতে পারি। ঝাল মুড়ি শপটা হচ্ছে আমার স্টার্টিং পয়েন্ট। আমার এটা ফ্যাশন হিসেবে নিছি। যখন ক্লাস থাকে ক্লাস করি, ক্লাস শেষ করে আমি এখানে আসি ।”
আব্বাস জানান কোন কাজই ছোট নয়। টিউশনি করিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে ঝাল মুড়ির দোকান দিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে তার মত আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করতে চান তিনি।
আব্বাস-” আমি হয়তো ক্যাম্পাস থেকে একদিন চলে যাব ।ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার পরও আশেপাশে একটা রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা করে যাব যেটার মাধ্যমে ক্যাম্পাসের স্টুডেন্টরা খাইতে পারবে।”
আব্বাসের ঝাল মুড়ির স্বাদ নিতে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভিড়ে লেগে যায়। শিক্ষার্থীরা জানান আব্বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও নিজ ক্যাম্পাসে ঝাল মুড়ি বিক্রি করছে ,তার এই সাহস আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে ।
১ম জন– আব্বাস আমাদের সহপাঠী ১৫ব্যাচের শিক্ষার্থী । ওর পরিবারিক অবস্থার কারণে কোনো পেশাকে ছোট না করে ভার্সিটির সামনে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেছে।
২য়– ব্যক্তিগতভাবে আমি ওকে আগে থেকেই চিনি সে হিসেবে জানি ও পারিবারিকভাবে কিরকম অসচ্ছল।
৩য়– অন্যদের তুলনায় তার ঝালমুড়িটা অবশ্যই অনেক উন্নত ধরনের। বিভিন্ন উপকরণ থাকে। আপনি যদি ওই দিকে তাকান তাহলে দেখবেন বিভিন্ন বেশিরভাগ উপাদানই রয়েছে তার ঝালমুড়িতে অন্যান্যদের ঝালমুড়ি থেকে। এটা অনেক সুস্বাদু এবং রুচি সম্মত।
৪র্থ– সে হচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। সে এখানে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেছে তাকে পরিশ্রমী শিক্ষার্থী বলতে হবে ,কারণ সে দারিদ্রতার কাছে হার মেনে যায়নি । তার স্বপ্নও পূরণ করছে এবং জীবিকাকেও কাজে লাগাচ্ছে।
৫ম– আব্বাসের যেই উদ্যোগ সেটা অবশ্যই অনেক বেশি প্রশংসনীয়। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি বা ছাত্র আছি আমরা অনেকে চিন্তা করে পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করা উচিত । কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে যেটা হয় এই যে ঝালমুড়িটা বিক্রি করছে ও, ও নিজেকে সাপোর্ট দিচ্ছে পরিবারকে সাপোর্ট দিচ্ছে , যেটা হচ্ছে আমাদের সবার জন্য উদাহরণ। এভাবেও আসলে পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়া যায়।
ঝাল মুড়ি খেতে আসা আব্বাসের সহপাঠীরা বলেন সে নিজের টাকায় দোকান দিয়েছে । ক্যাম্পসের বাইরে দোকান হওয়ায় ঝড় বৃষ্টিতে ঝামেলায় পড়তে হয়। তাই আব্বাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করে তাকে যেন ক্যাম্পাসের ভিতরে বসতে দেওয়া হয় ।
৬ষ্ঠ– তার মন-মানসিকতা এত বড় যে সে নিজে কষ্ট অরে আর্ন করে নিজের টাকায় চলতেছে । এটা প্রশংশনীয়। আমরা বন্ধু-বান্ধবেরা হেল্প করি এবং প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই যে তাকে যদি কম্পাসের ভিতর একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় ।
সব বাকি বন্ধু-বান্ধবরা যখন আড্ডা এবং ঘুরাঘুরিতে ব্যস্ত তখন নিজের বিশ্ববিদ্যালয় গেটে ঝালমুড়ি বিক্রি করে আব্বাস। এর মধ্যে দিয়ে সে আবারো প্রমাণ করে দিল কোন কাজই ছোট নয় । প্রয়োজন শুধু সাহস আর আন্তরিকতা।