রাজনৈতিক মঞ্চে দলবদলের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের বিএনপিতে যোগদান বা পুনর্বাসন রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এই প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে, যা রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করছে। বিএনপির দাবি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে তাদের দলে নতুন নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। তবে সমালোচকরা এটিকে রাজনৈতিক সুবিধাবাদ হিসেবে দেখছেন।
২০২৩ সাল থেকে বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিএনপির রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়েছেন। এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা, যারা একসময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি নিবেদিত ছিলেন, তারা এখন বিএনপির পতাকার নিচে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করছেন। তবে এই নেতারা প্রকাশ্যে তাদের পূর্বের পরিচয় বজায় রাখছেন, যেমন মুজিবকোট পরিধান করা। এই ধরনের দলবদলের ঘটনা ২০২৫ সালে আরও স্পষ্ট হয়েছে, যখন বিএনপির সিনিয়র নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন যে, তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য সকলকে একত্রিত করতে প্রস্তুত, এমনকি সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদেরও। একটি এক্স পোস্টে উল্লেখ করা হয় (X account: Revolt), বিএনপির এই উদ্যোগকে কেউ কেউ “ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন” হিসেবে সমালোচনা করেছেন।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাও বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বা তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ২০২৩ সালে বলেছিলেন, তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। এই ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ এটিকে গণতান্ত্রিক সমঝোতার ইঙ্গিত হিসেবে দেখলেও, অনেকে মনে করেন, এটি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ।
২০২৫ সালে এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপির অব্যাহতির পর তিনি বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গুঞ্জন শোনা যায়। এছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে অনেক নেতা, যারা একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারা বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে এমন কিছু নেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই দলবদলের পেছনে একদিকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অন্যদিকে বিএনপির গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপিতে যোগদান নিয়ে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিএনপির একজন স্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
নতুন নেতাদের যোগদান আমাদের দলকে শক্তিশালী করছে, তবে তাদের পূর্বের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের একাংশ এই দলবদলকে “বিশ্বাসঘাতকতা” হিসেবে দেখছে। একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন,
যারা একসময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলতেন, তারা এখন সুবিধাবাদের জন্য দল বদল করছেন।
বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে তাদের সাম্প্রতিক কর্মসূচি সাবেক আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের আকৃষ্ট করছে। তবে, এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদে বিএনপির অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপিকে নতুন নেতাদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি তাদের পূর্বের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
২০২৫ সালের রাজনৈতিক সমীকরণে এই দলবদল কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে।