ধর্মীয়

মৃত্যু আসার আগেই প্রস্তুতি নেওয়া মুমিনের কর্তব্য

মৃত্যুই প্রতিটি জীবনের অমোঘ পরিণতি। নিজের মৃত্যু আমরা চাই না। উপরন্তু মৃত্যুর কথা চিন্তাও করতে চাই না। আপনজনদের মৃত্যুতে ব্যথিত হই কিন্তু শত আপত্তি, বেদনা আর অনিচ্ছা সত্ত্বেও মৃত্যুই জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য। আরও বড় সত্য হলো- কখন মরব তা আমরা কেউই জানি না। সবচেয়ে বড় কথা হলো- যে জীবনের জন্য আমরা এত লালায়িত সে জীবনটি মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের তুলনায় কিছুই নয়। এজন্য জীবনের বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। যে আগন্তুককে কোনোভাবেই ফেরানো যাবে না, তাকে অভ্যর্থনার জন্য সদা সর্বদা প্রস্তুত থাকাই তো বুদ্ধিমানের কাজ। আর মৃত্যুর অভ্যর্থনা হলো তাকে বারবার স্মরণ করে সতর্ক থাকা। দুনিয়াতে আল্লাহ পাঠিয়েছেন যে কদিন তিনি বাঁচিয়ে রাখবেন ভালোভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

দুনিয়ার সফলতার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু কখনই তা আখেরাতকে নষ্ট করে নয়। যেহেতু চলেই যেতে হবে, কী হবে আর অকারণ বিবাদ করে, পরস্পরের সম্পর্ক নষ্ট করে মানুষের নিন্দা ও ধিক্কারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে মহান রবের কাছেও অপরাধী হয়ে যাওয়ার। যতটুকু পারা যায় নিরিবিলি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলা এবং নিজের পাথেয় সংগ্রহ করতে থাকা। যেন গুনাহটা কম হয়। অন্তত মানুষ মরার পর একবার হলেও যেন তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করে। অসুখে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কারণ সব অসুস্থতা ও কষ্ট মুমিনের জন্য সওয়াব বয়ে আনে। মুখে স্বাভাবিক বেদনা বা কষ্ট প্রকাশে অসুবিধা নেই। তবে অসুস্থতার জন্য আল্লাহকে, ভাগ্যকে দোষ দেওয়া, আপত্তিকর কথা বলা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। এতে কখনই বিপদ কাটে না। শুধু শুধু গুনাহ হয়। কোনো কষ্টেই মৃত্যু কামনা করা যাবে না।

জীবনটা আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে বড় নেয়ামত, একে নষ্ট করা, ক্ষতিগ্রস্ত করা, আত্মহত্যা করা তো দূরের কথা, শত কষ্টেও মৃত্যু কামনা করা যাবে না। এ কামনা মৃত্যুকে এগিয়ে আনে না, কষ্ট কমায় না, কিন্তু মুমিনের সব নেকি নষ্ট করে দেয় এবং গুনাহ অর্জনে সহায়তা করে। নবীজির চাচা হজরত আব্বাস (রা.) অসুস্থ হয়ে যখন মৃত্যু কামনা করেন, তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চাচা মৃত্যু কামনা করবেন না। আপনি যদি নেককার হন তবে জীবন বাড়লে নেকি বাড়বে। আর যদি বদকার হন তবে জীবন বাড়লে তওবা করার সুযোগ পাবেন। কাজেই কোনো অবস্থাতেই মৃত্যু কামনা করবেন না। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, একান্তই বাধ্য হলে কেউ বলতে পারবে, হে আল্লাহ যতক্ষণ আমার জন্য জীবন কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখুন। আর যখন আমার জন্য মৃত্যু অধিকতর কল্যাণকর হয় তখন আমাকে মৃত্যু দিন। (বুখারি শরিফ)। সব মুমিনেরই উচিত মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা। বেশি বেশি নেক আমল করা। সব রকমের গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং এ প্রতিজ্ঞা করা, গুনাহ যত ছোটই হোক করব না। নেকি যত ছোটই হোক কখনই ছাড়ব না। মানুষের পাওনা থাকলে আদায় করে দেওয়া বা আদায়ের ব্যবস্থা রাখা ও অসিয়ত করা। একটি বিশেষ অসিয়ত সব মুমিনেরই করা উচিত, তা হলো তাকে যেন পরিপূর্ণ সুন্নত পদ্ধতিতে দাফন করা হয়। সাহাবি-তাবেইনগণ এরূপ অসিয়ত করে যেতেন। মানুষের আখেরাতের সফলতা নির্ভর করে তার কর্মের ওপর। কাজেই শুধু মৃত্যুকালীন অবস্থা দেখে তাকে ভালো বা মন্দ বলা যায় না। তবে কোনো কোনো মৃত্যুকে ভালো বলা যায়।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার জীবনের সর্বশেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে ব্যক্তি একসময় না একসময় গুনাহগার হলেও শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ ইবনে হিব্বান)। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, মুমিনের মৃত্যু হয় কপালের ঘামের মধ্য দিয়ে। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, কোনো মুসলিম শুক্রবারের দিবসে বা রাতে মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তাকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। (তিরমিজি)। অর্থাৎ কর্মের হিসাব, পুরস্কার বা শাস্তি কেয়ামতের দিন হবে, তবে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত কবরের শাস্তি থেকে আল্লাহতায়ালা তাকে রক্ষা করবেন। শাহাদাত বা শহীদি মৃত্যুর মর্যাদার কথা আমরা সবাই জানি। বিভিন্ন সহিহ হাদিসে নিম্নরূপ মৃত্যুকে শাহাদাত বা শহীদি মৃত্যু বলা হয়েছে। ১. প্লেগ বা মহামারিতে মৃত্যু। ২. পেটের পীড়ায় মৃত্যু। ৩. পানিতে ডুবে, ধ্বংসস্তূপে বা বাড়িঘর ধসে মৃত্যু। ৪. সন্তান প্রসব অবস্থায় মৃত্যু। ৫. অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু। ৬. বক্ষব্যাধিতে মৃত্যু। ৭. যক্ষ্মা রোগে মৃত্যু ৮. নিজের জীবন, পরিবার-পরিজনের সম্ভ্রম বা সম্পদ রক্ষার্থে মৃত্যু।

আরও পড়ুনঃ  অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয় ইসলাম

এসব হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি যেসব দুরারোগ্য বৃদ্ধির কারণে মৃত্যু, অস্বাভাবিক বা কষ্টকর মৃত্যু, নিজের অধিকার রক্ষার জন্য মৃত্যু এবং মজলুম হয়ে নিহত হওয়া মৃত্যুকে শাহাদাতের মৃত্যু বলে গণ্য হবে। মৃত্যুপথযাত্রী অসুস্থ বা মৃত ব্যক্তিকে দেখতে গেলে তার এবং তার পরিবারের জন্য ভালো দোয়া করতে হবে। এ সময়ে দোয়ায় ফেরেশতারা আমিন বলেন বলে সহিহ হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।

রেনেসাঁ টাইমস/সিয়াম

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *