রাজধানীর দরপত্রে তদবিরের জোয়ার, প্রকৌশলীরা চাপে নাজেহাল!


রাজধানীর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন নগর সংস্থার দরপত্র প্রক্রিয়ায় তদবিরের চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। উন্নয়ন, সেবা ও কেনাকাটার কাজ নিয়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা। তদবিরের এই প্রবণতা দরপত্র প্রক্রিয়ায় নানারকম বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে, যা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করছে।
সরকারি প্রকল্পগুলোতে আগ্রহী ঠিকাদারদের মধ্যে বেশিরভাগেরই অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তবু কাজ পেতে তারা নানাভাবে প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের চাপ দিচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশে দরপত্র প্রক্রিয়ায় যোগ্যতার চেয়ে তদবির বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র প্রক্রিয়া পরিচালিত হলেও প্রভাবশালী মহলের চাপ উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) এক প্রকৌশলী জানান, তার অফিসে প্রতিদিন অগণিত লোকের আনাগোনা থাকে। কেউ সরাসরি দেখা করতে আসেন, আবার কেউ ফোনে তদবির করেন। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দরপত্রে অংশ নেওয়া এক ঠিকাদার কাজ না পেয়ে সিইও মীর খায়রুল আলমকে হুমকি দেন, যা প্রমাণ করে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক।
রাজউক এবং ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারাও একই সমস্যায় পড়েছেন। পট পরিবর্তনের পর নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অনেক ঠিকাদার নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে কাজ আদায়ের চেষ্টা করছেন। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফজলুর রহমান বলেন, “আমরা নিয়মের বাইরে কোনো কাজ করছি না, কিন্তু তদবিরের চাপ সামলাতে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”
তদবিরের কারণে প্রকৌশলীদের অনেক সময় নিয়ম বহির্ভূত প্রস্তাব মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। তবে সিটি করপোরেশনগুলো নিয়ম মেনে কাজ করার দাবি করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। কাজ না পাওয়া ঠিকাদাররা বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন এবং দরপত্র প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।
নগর সেবায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তদবিরের সংস্কৃতি বন্ধ করা জরুরি। রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে নিয়ম মেনে দরপত্র প্রক্রিয়া পরিচালিত হলে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ঠিকাদাররা কাজের সুযোগ পাবেন, যা নগর উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
মোহাম্মাদ নূরে আলম/এন,এ