১২ এপ্রিল, ২০২৫। এই দিনটি শুধু ঢাকার জন্য নয়, গোটা বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন হয়ে থাকবে। সুহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্র ছিল নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অটল সহানুভূতির প্রকাশ। প্রায় এক লাখ মানুষ একত্রিত হয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তা শুধু রাজনীতির ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায় না; এটি মানবতার পক্ষের এক নির্ভীক অবস্থান।
এই সমাবেশ ছিল এমন এক সময়ে, যখন বিশ্বজুড়ে গাজা নিয়ে নীরবতা কিংবা কৌশলগত ন্যায্যতার ছদ্মবেশে পাশ কাটানোর প্রবণতা বেড়েছে। ঠিক তখনই বাংলাদেশের জনগণ জানিয়ে দিলেন, যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারা দুনিয়া নিশ্চুপ, সেটার প্রতিবাদ তারা রাস্তায় নেমে করবেন।
প্রতিবাদের দাবি ছিল সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত—
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন,
বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘Except Israel’ শর্তের পুনর্বহাল,
জায়নিস্ট পণ্য বর্জন,
গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো
এবং জাতীয় পাঠ্যক্রমে ফিলিস্তিনের ইতিহাস সংযোজন।
এই দাবিগুলো শুধু আবেগের উপর নির্ভর করে না; এগুলো আমাদের পররাষ্ট্রনীতি, শিক্ষা ও নাগরিক সচেতনতার গভীর বাস্তবতা তুলে ধরে।
এই সমাবেশে শুধু রাজনৈতিক নেতারাই ছিলেন না, ছিলেন খেলোয়াড়, আলেম, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ। এটি প্রমাণ করে, গাজা ইস্যু শুধু মুসলিম জাগরণের বিষয় নয়, এটি এখন এক বৈশ্বিক মানবিক বিবেকের প্রশ্ন।
প্রতীকী কফিন, নেতানিয়াহু-ট্রাম্প-মোদি-র কুশপুত্তলিকা—এগুলো হয়তো কারো কাছে নাটকীয় মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এগুলোর মধ্য দিয়েই ফুটে উঠেছে সৃষ্ট ক্ষোভ ও বেদনাবোধ। এসব প্রতীক আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কীভাবে বিশ্ব নেতৃত্ব আজ ব্যর্থ মানবতার পক্ষে স্পষ্টভাবে দাঁড়াতে।
এই প্রতিবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ডের নাম নয়, এটি এক দীর্ঘ সংগ্রামের নাম; এক অবিচারের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিরোধের নাম।
বাংলাদেশ এই পথচলায় একাই নয়, কিন্তু এ দেশের মানুষের প্রতিবাদ এক অনন্য নজির—যেখানে ধর্ম, রাজনীতি, কূটনীতি, মানবতা—সব এক হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্যাতিত মানুষের পাশে।
আজকের এই সমাবেশ ভবিষ্যৎকে একটিই বার্তা দিয়েছে—“আমরা চুপ থাকবো না।”
এটাই আজকের বাংলাদেশের মানবিক অবস্থান, এবং তা বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, কোথায় আজও বিবেক জাগ্রত আছে।
মতামত | লেখক: মুহাম্মাদ নূরে আলম, তরুণ কলামিস্ট ও গণমাধ্যমকর্মী