ঢাকা, ২১ মার্চ ২০২৪: বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের কারণে ঋণ করে খাবার কেনার মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, দেশের প্রায় ৩০% পরিবার নিয়মিত ঋণ করে তাদের খাদ্য চাহিদা পূরণ করছে।
এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। গবেষণায় বলা হয়েছে যে, গ্রামীণ এলাকায় ঋণ করে খাবার কেনার মানুষের সংখ্যা শহুরে এলাকার তুলনায় অনেক বেশি। গ্রামে প্রায় ৪০% পরিবার ঋণের উপর নির্ভরশীল, যখন শহরে এই সংখ্যা প্রায় ২০%।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, ঋণ করে খাবার কেনার মানুষের সংখ্যা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ২০%।
এই বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু কারণ দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে:
বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি: গত কয়েক বছরে চাল, ডাল, তেল, সবজি, মাংস, ইত্যাদির দাম অনেক বেড়েছে। এর ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাবার কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আয়ের অভাব: অনেক মানুষের আয় তাদের পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট নয়।
কাজের অভাব: অনেক মানুষ বেকার, যার ফলে তাদের আয়ের কোনো উৎস নেই।
ঋণের সহজলভ্যতা: মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলো সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করছে, যার ফলে অনেক মানুষ ঋণ করে খাবার কেনার জন্য বাধ্য হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। ঋণ করে খাবার কেনার মানুষদের দীর্ঘমেয়াদী ঋণের বোঝা বহন করতে হয়, যা তাদের দারিদ্র্যের চক্রে আটকে রাখে।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে:
খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ: সরকারকে বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি: সরকারকে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
দারিদ্র্য বিমোচন: সরকারকে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঋণের সুদের হার কমানো: সরকারকে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে সরকার ঋণ করে খাবার কেনার মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারেন। এবং যদি সরকার এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে সামাজিক অশান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
মো: নূরে আলম, শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী/রেনেসাঁ টাইমস