বাংলাদেশ

জন্ম-মৃত্যু একসঙ্গে, পাশাপাশি কবরে দাফন

একসঙ্গে জন্ম। এরপর থেকে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। পোশাক, জুতা ও গেঞ্জিসহ যাবতীয় সব জিনিস মিলিয়ে পরতো। সবকিছুর মিল দেখে যে কেউ বুঝতো তারা যমজ।

শেষদিন পুকুর ঘাটে দুই জোড়া স্যান্ডেল রেখে যেন বলে গেলো তারা আর নেই। একসঙ্গেই চলে গেলো না ফেরার দেশে। শেষমেশ পাশাপাশি কবরে শায়িত হলো।

বলছি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের ঘোষগাঁও গ্রামের যমজ ভাই মো. হাসান (৮) ও মো. হোসেনের (৮) কথা। মুরাদনগর উপজেলার মৃত কবির হোসেনের ছেলে তারা। শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে বাড়ির পুকুর ঘাটে বসে খেলছিল হাসান ও হোসেন। হঠাৎ পুকুরে পড়ে ডুবে যায় হাসান।

তা দেখে বাঁচাতে নেমে পড়ে হোসেন। এতে দুই ভাইয়েরই মৃত্যু হয়েছে। কিছুক্ষণ পর ঘাটে পড়ে থাকা স্যান্ডেল দেখে তাদের লাশ উদ্ধার করেন স্বজনরা। বিকালে একসঙ্গে জানাজা শেষে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়।

ঘটনার পর থেকে বিজয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তানভীর হোসেন পারভেজ ওই পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে আছেন। তিনি বলেন, ‘তাদের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। গ্রামের সবার চোখে পানি ঝরছে।

যমজ দুই ভাই সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। সবাই ভাগনে বলে ডাকতো। কারণ এটা তাদের নানার বাড়ি। একই রকম পোশাক ও জুতা দেখলেই তাদের চেনা যেতো। অনেক আদর করতাম। হঠাৎ এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে তারা চলে যাবে কেউ ভাবতে পারেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এশার নামাজের পর পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষগাঁও গ্রামের চৌধুরী বাড়ির মসজিদের সামনে জানাজা হয়েছে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি তাদের দাফন করা হয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসান ও হোসেনের বাবার বাড়ি মুরাদনগরে। এক বছর আগে তাদের বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার আগে ঘোষগাঁও গ্রামে বাড়ি করার জন্য জমি কিনে রেখে যান। বাড়ি করার সময় জমির এক পাশে পুকুর কেটে ঘরের ভিটা বানান তাদের মা। পুকুরটি অনেক গভীর।

শনিবার দুপুরে পুকুর ঘাটে বসে খেলছিল দুই ভাই। হঠাৎ এক ভাই পুকুরে পড়ে গেলে আরেক ভাই বাঁচাতে নেমে যায়। এতে দুই জনেরই মৃত্যু হয়। পরে পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করেছেন স্বজনরা।

আরও পড়ুনঃ  ৪০ লাখ টাকার ইলিশ পেলেন বঙ্গোপসাগরে এক জেলে

সদর দক্ষিণ থানার ওসি দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেছে পুলিশ। স্বজনদের কোনও অভিযোগ না থাকায় আবেদনের ভিত্তিতে লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *