শিক্ষাঙ্গন

এইচএসসি পরীক্ষার দিন ১৫ শিক্ষার্থী জানলো ভর্তিই ছিল ভুয়া

যাবতীয় ফি দিয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিল রাশেদুল হক, মিলন হাসান, উম্মে হাবীবা ও শারমিন আক্তার। এর পর কলেজ ইউনিফর্মে নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা সবকিছুতেই অংশগ্রহণ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু পরীক্ষার দিন তারা চারজনসহ অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী জানতে পারে কলেজে তাদের ভর্তিটি ছিল ভুয়া। অর্থাৎ, তারা ওই কলেজের শিক্ষার্থীই না। ফলে এই ১৫ শিক্ষার্থীর আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।

ভুক্তভোগীরা জানায়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে অনলাইনে আবেদন করে কোনো কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি তারা। এই সুযোগে তাদের সরকারি শাহ সুলতান কলেজে ভর্তি করানোর প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নেন কলেজের দুই অফিস সহায়ক হারুন মিয়া ও আব্দুল হান্নান। টাকা দেওয়ার পর তাদের প্রত্যেককেই কলেজ প্যাডে দেওয়া হয় ভর্তির রসিদ। এর পর গত দুই বছরে কলেজের নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তারা।

হারুন মিয়ার কাছে পরিশোধ করেছে বেতন ও পরীক্ষার ফি। এমনকি এইচএসসির ফরম পূরণ বাবদ তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে হারুন ৫ হাজার টাকা করেও নেন। এর মধ্যে পরীক্ষা ঘনিয়ে আসার পরও প্রবেশপত্র না পাওয়ায় এই ১৫ শিক্ষার্থী কলেজ অফিসে খোঁজখবর করতে শুরু করে। হারুনের কাছে প্রবেশপত্র বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শুরু করেন টালবাহানা। পরীক্ষার আগেই প্রবেশপত্র দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শুরুর আগে ১৫ শিক্ষার্থী কলেজের অফিস রেজিস্টার পরীক্ষা করে জানতে পারে, তাদের ভর্তি প্রক্রিয়াটাই ছিল ভুয়া।

এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরই প্রধান অভিযুক্ত শাহ সুলতান কলেজের অফিস সহায়ক হারুন পালিয়ে গেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন আরেক অভিযুক্ত কলেজের অফিস সহায়ক হান্নান। তিনি বলেন, একজনের ভর্তির টাকা নিয়েছিলাম। সব টাকাই হারুনকে দিয়েছি। এটা আমার ভুল।

আরও পড়ুনঃ  ছাত্রলীগের হামলা ও লুটপাতে তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মিলন বলে, বিকেল থেকে শ্রমিকের কাজ করে দিনে কলেজে পড়তাম। হারুন ও হান্নান মিলে দুই বছরে আমার থেকে অন্তত ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। তারা বলত, যেহেতু আমাদের ভর্তি অফলাইনে বা নিয়মবহির্ভূতভাবে হয়েছে, তাই বেতন, পরীক্ষার ফিসহ সবকিছু তার মাধ্যমেই গোপনে পরিশোধ করতে হবে। কলেজে আমরা দুই বছর নিয়মিত ক্লাস করেছি, পরীক্ষাও দিয়েছি। কিন্তু এখন দেখলাম ভর্তিই ছিল ভুয়া।

আরেক ভুক্তভোগী উম্মে হাবীবা বলে, এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে হারুনের কাছে ভর্তির টাকা দিয়েছিলাম। কলেজ ইউনিফর্ম, ব্যাজ, রোল নম্বর সবই আছে। কলেজের রসিদে এতদিন সব কাজ হয়েছে। অথচ পরীক্ষার সময় জানলাম আমি শিক্ষার্থীই নই! এর সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত হারুনের ফোন নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক রেজাউন নবী বলেন, অন্তত ১৫ শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারণার খবর আমরা শুনেছি। এটি ঘৃণ্য অপরাধ। শেষ মুহূর্তে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুই করতে পারিনি। জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। এই শিক্ষার্থীদের আগামীতে করণীয় নিয়ে আমরা বোর্ডের সঙ্গে কথা বলব।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *