মা-ছেলের ১৮৩ দিন ধরে প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন
অনশন অনেক কষ্টের। নিজের বাড়িঘর থাকতে কেন এভাবে এখানে পড়ে থাকতে হচ্ছে। প্রশাসন যদি আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে, আমাদের ওপর আর হামলা হবে না, জীবনের নিরাপত্তা পাব, তাহলে বাড়ি গিয়ে থাকতে পারব। আমরা বাড়ি যেতে চাই।
শেখ ফরিদ ও তার মা ১৮৩ দিন ধরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন করছেন। তারা একটি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে জমি দখল ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। রাজধানীর ব্যস্ততম একটি স্থান জাতীয় প্রেস ক্লাব। সভা-প্রতিবাদ-মানববন্ধন আর কর্মব্যস্ত মানুষের ভিড় লেগে থাকে এ প্রেস ক্লাব ঘিরে। সেখানেই দেখা মিলল এক হতভাগা মা-ছেলের।
৬০ বছর বয়সী মা ফাতেমা বেগমের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন ৪১ বছরের শেখ ফরিদ মৃধা। রুগণ ও শুকনো শরীর নিয়ে কোনোভাবেই উঠে বসতে পারছিলেন না। এর মধ্যেই হঠাৎ শুরু হয় বৃষ্টি। অসুস্থ ছেলেকে টেনে নিয়ে কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছানোর আগেই ভিজে যান দুজন।
ফরিদ জানান, তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুস্তমপুর গ্রামে থাকেন। তার বাবা ৪৮ দশমিক ৬২ শতাংশ জমি কিনেছেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি এখন ওয়ারিশসূত্রে মালিক। কিন্তু প্রতিপক্ষ মোজাম্মেল হোসেন ও মোশাররফ হোসেন জমি দখল করতে চাইছে।
ফরিদ বলেন, অনশন অনেক কষ্টের। নিজের বাড়িঘর থাকতে কেন এভাবে এখানে পড়ে থাকতে হচ্ছে। প্রশাসন যদি আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে, আমাদের ওপর আর হামলা হবে না, জীবনের নিরাপত্তা পাব, তাহলে বাড়ি গিয়ে থাকতে পারব। আমরা বাড়ি যেতে চাই।
এসব ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ২০২২ সালে আমার ওপর হামলা হয়। ডিসেম্বর মাসে হামলার পর ফরিদগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে আমি ৯৬ ঘণ্টা অনশন করেছিলাম। এরপর ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ আমার মামলা নিয়েছিল। এর আগেও ২০২২ সালের ১৩ মে মোজাম্মেল হোসেন ও তার লোকজন প্রকাশ্যে আমাদের দুই ভাইকে বেঁধে রড দিয়ে মারধর করেছিল। আর কত মার খাব আমরা।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ফরিদ ও আমাদের বাড়ি খুবই কাছাকাছি। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও দুই পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল; কিন্তু আমার দাদা, দাদি ও বাবার কবর যেখানে, সেখানে তারা প্রস্রাব করতে চায়। তারা যদি জায়গার মূল মালিক হয়, আইন অনুযায়ী যদি তারা পায়, তাহলে অবশ্যই তাদের জায়গা তারা নিয়ে নেবে।
মারধরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, মিলাদের দিন ফরিদ ও তার ভাই বাবার কবরে প্রস্রাব করতে চেয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে মারামারি হয়। এরপর সে মামলা করে। সেই মামলায় আমাদের তিনজন গ্রেপ্তার হয়। এখন জামিনে আছি সবাই। মামলা আদালতে চলমান। তবে প্রাণনাশের হুমকি ও মারধরের বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা সবাই ঢাকায় থাকি। তাহলে সে (ফরিদ) বাড়িতে গেলে আমরা মারধর করব কীভাবে?
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল মান্নান বলেন, তাদের দুপক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে ঝামেলা। কেউ কারও কথা মানে না। এটি নিয়ে এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন সবাই মিলে সমাধানের জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছে। কমিটিও করা হয়েছিল। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইন অনুযায়ী যা করার পুলিশের পক্ষ থেকে সেটা সবসময়ই করি। আপাতত দুপক্ষকেই বলা হয়েছে, আদালতের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কেউ জায়গার ওপর যাবেন না।
ফরিদ ও তার মায়ের অনশনের ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও রাজনৈতিক দল। তারা প্রশাসনের কাছে জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।