মতামত

বাসা ভাড়া নৈরাজ্য: রাজধানীতে থাকাই কি এখন বিলাসিতা?

রাজধানীতে প্রতি বছর কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ি ভাড়া বাড়ানো যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতার তোয়াক্কা না করে নিজ নিয়মে ভাড়া বাড়িয়ে চলেছেন বাড়িওয়ালারা। লাগামহীন বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপ চান ভাড়াটিয়ারা।

রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বাড়ার লাগাম টানবে কে?

ঢাকা, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরী, যেখানে প্রতি বছর কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ি ভাড়া বাড়ানো যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করে বাড়িওয়ালারা নিজের মতো করে ভাড়া বাড়িয়ে চলেছেন, যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ ভাড়াটিয়ারা।

বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে পাঁচ গুণ। অথচ ১৯৯১ সালে প্রণীত ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন’ থাকলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এখন পর্যন্ত গঠিত হয়নি কোনো স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা, নেই পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো মনিটরিং সেলও। ফলে বাড়িওয়ালারা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া নির্ধারণ করছেন, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য চরম সংকট তৈরি করছে।

আট বছর ধরে মিরপুরে বসবাসরত নুরে আলম বলেন, “বাড়িওয়ালারা নিজেদের মনমতো ভাড়া নির্ধারণ করেন। ভাড়ার পাশাপাশি সার্ভিস চার্জও বাড়ানো হয়, যা অনেকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।”

সরকারি উদ্যোগে মেট্রোরেল চালু হলেও এর সুবিধার তুলনায় বাড়ি ভাড়ার অস্বাভাবিক বৃদ্ধিই বেশি চোখে পড়েছে। মিরপুর, ফার্মগেট ও উত্তরা এলাকায় মেট্রোরেলের সংযোগের কারণে হু হু করে বেড়েছে বাসা ভাড়া।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “নিরাপদ আবাসন নাগরিকের মৌলিক অধিকার হলেও সরকারের ব্যর্থতার কারণে ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না।” 

তিনি আরও বলেন, ভাড়াটিয়ারা সরাসরি ভাড়া দিলে যত আইনই করুক না কেন বাড়িওয়ালাদের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে আটকানো যাবে না।  ভাড়ার বিষয়ে সরকার যদি কোনো একটা সংস্থা তৈরি করে, সেখানে যদি ভাড়াটিয়ারা ভাড়া দেয় তাহলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পাশাপাশি সরকারও একটা রাজস্ব পাবে। বিশ্বের অনেক দেশেই এমনটা চালু রয়েছে।

ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বলেন,

বাসার বাড়তি ভাড়া নিয়ে আমরা বার বার কথা বলছি। কিন্তু কর্ণপাতও করছে না বাড়িওয়ালারা। সরকার তো কোনো কথাই বলে না। ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলও কথা বলতে রাজি নয়। কারণ তাদের মধ্যেই ঢাকার অনেক বাসার মালিক রয়েছেন।

সমাধানের পথ কী?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভাড়াটিয়াদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন জরুরি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থার মাধ্যমে ভাড়া সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে, যা বাংলাদেশেও চালু করা যেতে পারে। এতে একদিকে ভাড়াটিয়ারা সুরক্ষা পাবেন, অন্যদিকে সরকারও নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে।

আরও পড়ুনঃ  আওয়ামী লীগ বাতিল করল সমাবেশ, বিএনপির কর্মসূচি ৩১ জুলাই

ভাড়াটিয়ারা বলছেন, সরকার যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে রাজধানীতে আবাসন খরচ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলবে।

মো নুরে আলম
লেখক, গবেষক ও বিশ্লেষক
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button