মতামত

মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজে নতুন নীতি: গ্রাহকের জন্য কতটা লাভজনক?

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজের সীমা তুলে দিয়ে নতুন নীতিমালা চালু করেছে। এতে গ্রাহকদের জন্য যেমন নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে, তেমনি এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এই পরিবর্তন গ্রাহক ও অপারেটর উভয়ের জন্য কতটা লাভজনক বা ক্ষতিকর, তা বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন রয়েছে।

নতুন নীতিমালায় সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো প্যাকেজের বহুমুখিতা। গ্রাহকরা এখন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ঘণ্টা, ১ দিন, ৩ দিন কিংবা আরও দীর্ঘমেয়াদি প্যাকেজ কিনতে পারবেন। এটি বিশেষত নিম্নআয়ের গ্রাহক কিংবা কম ডাটা ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী, কারণ তারা অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ে পড়বেন না।

আরেকটি বড় সুবিধা হলো ক্যারি ফরোয়ার্ড সুবিধা। পূর্বে একটি প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হলে অব্যবহৃত ডাটা আর কাজে আসত না। এখন একই প্যাকেজ কিনলে পূর্বের অব্যবহৃত ডাটা ব্যবহার করা যাবে। এটি গ্রাহকদের জন্য একটি ইতিবাচক দিক।

রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজ চালুর মাধ্যমে অপারেটররা গ্রাহকদের চাহিদা বুঝে আরও উন্নত সেবা দিতে পারবে। এই উদ্যোগ গ্রাহকবান্ধব নীতি তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

তবে এই নীতিমালার কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এখনো একটি বড় প্রশ্ন। অপারেটররা যদি স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজে মানসম্পন্ন ইন্টারনেট না দেয়, তবে গ্রাহকদের এই সুবিধা কোনো কাজে আসবে না।

পাশাপাশি, ঘণ্টাভিত্তিক প্যাকেজে প্রতি ঘণ্টায় ২০০ এমবি ডাটা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নাও হতে পারে। এর ফলে গ্রাহকদের বেশি দামে ডাটা কিনতে হতে পারে।

এছাড়া, রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কোনো প্যাকেজ দেওয়া যাবে না—এই বিধিনিষেধ রাতজাগা কর্মী বা শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

এ ধরনের নীতিমালা গ্রাহকদের জন্য নমনীয়তা এনেছে, কিন্তু অপারেটরদের ওপর চাপ তৈরি করবে। এখন অপারেটরদের গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ তৈরি করতে হবে। এটি তাদের প্রযুক্তিগত খরচ বাড়াবে।

আরও পড়ুনঃ  নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

অন্যদিকে, গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজনমতো প্যাকেজ বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এতে ডাটার অপচয় কমবে এবং খরচও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে যদি অপারেটররা প্রতিযোগিতার দোহাই দিয়ে বেশি দামে প্যাকেজ বাজারজাত করে, তবে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

গ্রাহকদের উচিত তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক প্যাকেজ বেছে নেওয়া এবং অপারেটরদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেবা পাচ্ছেন কি না, তা নজরে রাখা। প্রয়োজনে বিটিআরসিকে অভিযোগ জানানোর সুযোগও রাখা হয়েছে।

বিটিআরসির নতুন নীতিমালা গ্রাহকদের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। তবে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। গ্রাহকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে পারলেই এই উদ্যোগ সফল হবে। অন্যথায়, এটি শুধু অপারেটরদের ব্যবসায়িক সুবিধার হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

– মুহাম্মদ নুরে আলম
লেখক, গবেষক ও বিশ্লেষক
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button