ধর্ষণ প্রসঙ্গঃ আইনের ছাত্র হয়ে কিভাবে চুপ থাকি


সম্প্রতি চলতি বছরের ৮মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সৈকতে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে যান এক কলেজছাত্রী। এ সময় বন্ধুকে মারধর করে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে ওই কলেজছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন চার বখাটে। তাছাড়া একই মাসের ৬ তারিখ মাগুরায় একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যা দেশ ব্যাপী তুমুল নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির শঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। কেবলমাত্র ৮ বছরে পা দেয়া শিশু আছিয়া বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বোনের শশুরের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে শিশুটির দুলাভাই নিজেও জড়িত বলে গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি। একজন আইনের ছাত্র ও দেশের সাধারণ নাগরিক হয়ে এমন ঘটনা আর সহ্য হচ্ছে না। দেশের আনাচে কানাচে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। এসব ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলো কেবল বিবৃতি দিলেও চোখে পড়ার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যে টুকু নিচ্ছে তাও প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। বিপরীতে দিকে চোখে কাঠের চশমা লাগিয়ে বসে আছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যথেষ্ট প্রমাণ থাকার পরও গ্রেফতার পাষণ্ডগুলোর শাস্তি নিশ্চিতে ১৮০ দিন অপেক্ষা করবে তারা। জাতি যদি এ ধরনের প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থাকে রাম ছাগলের দল বলে মন্তব্য করে তাহলে আইনের ছাত্র হিসেবে আমিও সেটি সমর্থন করবো।
ধর্ষণ-ব্যভিচার সামাজিক এবং ধর্মীয় দিক থেকে নিকৃষ্টতম অপরাধ। আমরা সভ্য সমাজে বসবাস করলেও আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের মতো গর্হিত কাজ চলছে। আজকের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, যথাযথ আইনের প্রয়োগ না থাকা৷ আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ায় ধর্ষকদের উচিত বিচার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে,সমাজের মধ্যে দিনকে দিন বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
এসব রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগই একমাত্র পথ। ধর্ষকদের জন্য একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োগে ধর্ষণ কমিয়ে এনে নির্মূল করা সম্ভব। ধর্ষণ নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের আইনের প্রয়োগ দেখা যায়। আমাদের দেশে ধর্ষণ একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ, যার জন্য সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া হতে পারে। বিচার দ্রুত করার জন্য ও রয়েছে বিশেষ ট্রাইবুনাল আদালত।
বাংলাদেশে ধর্ষণের সংজ্ঞা ও শাস্তি মূলত দণ্ডবিধি (১৮৬০)এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (২০০০) অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
দন্ডবিধি ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে,যদি কোনো পুরুষ একজন নারীর সঙ্গে তার সম্মতি ছাড়া,বা ভয়ভীতি দেখিয়ে,বা প্রতারণার মাধ্যমে,বা নাবালিকা (১৮ বছরের কম বয়সী) মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে তা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
পাশাপাশি ধারা ৩৭৬ এ বলা হয়েছে- ধর্ষণের শাস্তি হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।
যদি ধর্ষণের ফলে ভিকটিম মারা যায় বা গুরুতর আহত হয়তবে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।
দৃশ্যমান পরিস্থিতিতে,আমাদের সমাজের প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন হতে হবে। এর সঙ্গে, রাষ্ট্রের উচিত আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা।
লেখক-
আলাউদ্দিন হোসেন আলো
শিক্ষার্থী,আইন বিভাগ।
সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা।