অপরাধ

শত কোটি টাকা মেরে MTFE পরিচালক দু’জনে গেলেন হজ্বে

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে অনলাইন বিনিয়োগ প্লাটর্ফম ‘এমটিএফই’ অ্যাপে গ্রাহকের বিনিয়োগের শত কোটি টাকা মেরে দিয়ে হজে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির দুই পরিচালক। এ ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পথে বসে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে বিনিয়োগকারীরা পথে বসলেও মহা সুখে হজ করছেন কোম্পানীর দুই কর্ণধার। তারা ওমরা করতে গেছেন সৌদি আরবে। হজের সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ছবি নিয়ে অনেকে অনেক রকম মন্তব্য করছেন।

ডেসটিনি, রিং আইডি, নিউওয়ে, আমাজান বিডি, এসবিএসএল, ইভ্যালির পর এবার বিদেশ থেকে পরিচালিত এমটিএফই অ্যাপে প্রায় শতকোটি টাকা খোয়ালেন কুমারখালী উপজেলার প্রায় দুই হাজার মানুষ। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, গাড়িচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। যাদের অধিকাংশই বসবাস করেন পৌরসভার মধ্যে।

বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য, রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার আশায় কুমারখালীসহ কুষ্টিয়া জেলায় অন্তত পাঁচ হাজার জন প্রায় ৮ হাজার থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছিলেন। গত শুক্রবার থেকে অ্যাপসটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ( এমএলএম) পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করত। যা দেশের আইনে অবৈধ।

জানা গেছে, কুমারখালীতে ‘এমটিএফই’র মূলহোতা পৌরসভার বাটিকামারা মধ্যপাড়ার মসলেম উদ্দিনের ছেলে মো. মিজানুর রহমান। তিনি ফেমাস ফুলকুঁড়ি বিদ্যালয়ের পরিচালক। আর তার প্রধান সহকারী ছিলেন পৌরসভার ঝাউতলা এলাকার তোফাজ্জেলের ছেলে মো. মাসুম আলী। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন। চাকুরি করতেন পুলিশ সদর দপ্তরের আইটি সেক্টরে। সম্প্রতি তিনি পুলিশের চাকুরি ছেড়ে ‘এমটিএফই’সহ বেশকিছু অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন।

কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সিঙ্গার প্লাজার দুই তলায় অফিস করে প্রায় দেড় বছর ধরে এ ব্যবসা পরিচালনা করেন। মাসুম ও মিজানের মাধ্যমে উপজেলায় প্রায় দুই হাজার মানুষ বিনিয়োগ করেছে। কারও মাধ্যমে ১০০ জন বা দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে কোম্পানি তাকে কান্ট্রি অফ অপারেশন সার্ভিস (সিইও) পদমর্যাদা দেয়। মিজানুর কুষ্টিয়ার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সিইও পদে ছিলেন। তার পরের স্থান মাসুম আলীর। মাসুমের মা রেখা খাতুনও আছে সিইও পদে।

গত ১১ আগষ্ট মিজানুর ও মাসুম সৌদিআরবে ওমরাহ হজে গিয়েছেন। এরপর থেকেই অ্যাপসটিতে নানা সমস্যা ও কমিশন কমে যায়। গত শুক্রবার (১৮ আগষ্ট) থেকে অ্যাপস বন্ধ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে উদাও MTFE

এ বিষয়ে ঝাউতলার সান্টুর কলেজ পড়ুয়া ছেলে আব্দুস সামাদ বলেন, তিনি জানুয়ারি মাসে মাসুমের মাধ্যমে ৯০০ ডলার (প্রায় এক লাখ ৪ হাজার টাকা) বিনিয়োগ করেন। প্রথম দিকে ভালই লাভ হতো। মাসখানেক ধরে অ্যাপসে নানা জটিলতা দেখা যায়। লাভও কমে যায়। গত শুক্রবার তার এক হাজার ৪০০ ডলার নিয়ে কোম্পানি হারিয়ে গেছে। তার ভাষ্য, জেলায় অন্তত পাঁচ হাজার জন বিনিয়োগ করেছিলেন।

হলবাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, মাসখানেক আগে ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এ পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার ২০০ টাকা উত্তোলন করেছেন। হঠাৎ অ্যাপসটি অচল হয়ে গেছে। তার ভাষ্য, কুমারখালী থেকে প্রায় দুই হাজার মানুষের শত কোটি টাকা নিয়ে গেছে কোম্পানিটি।

শনিবার (১৯ আগষ্ট) বিকেলে পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের ঝাউতলা এলাকায় সিইও মাসুম আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মাসুমের ঘরে ‘এমটিএফই’র বিভিন্ন জনের হিসাবের খাতা ও ফাইলপত্র। সৌদিআরবে ওমরা হজে গেছেন মাসুম আলী।

এসময় তার মা রেখা খাতুন বলেন, মাসুম পুলিশের চাকুরি করত। চাকুরি ভাল না লাগায় দেড় বছর আগে ছেড়ে দেয়। এরপর ‘এমটিএফই’ ও বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসা শুরু করে। তিনি নিজেও ছাগল বিক্রি করে ছেলের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনিও সিইও পদে আছেন। তিনি আরও বলেন, তার ছেলের কোন দোষ নেই। মানুষ রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার লোভে বিনিয়োগ করেছে। তার ছেলে সৌদি আরব হজে গেছেন।

প্রধান সিইও মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তিনিও হজে গেছেন। বাড়িতে তার স্ত্রী সুমি খাতুন। তবে তিনি এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে ‘এমপিএফই’ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তবে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button