ফিচার

মিরপুরের রূপান্তর: মেট্রোরেলের অভূতপূর্ব প্রভাব

তেইশ বছর আগে, মিরপুর নিয়ে প্রচলিত ছিল নানা রঙ্গরসিকতা। তখন মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলছিল, মাটির নিচে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন স্থাপন করা হচ্ছিল। ফলে ঢাকা-মিরপুর যাতায়াত ছিল ভোগান্তির আরেক নাম। যাদের সুযোগ ছিল, তারা নগরীর অন্য এলাকায় বাসা পাল্টে নিয়েছিল।

কিন্তু আজ দিন বদলেছে, মিরপুরের বাসিন্দারা এখন উত্তরা, ফার্মগেট, শাহবাগ ও গুলিস্তানে সহজে যাতায়াত করতে পারছেন। মেট্রোরেল সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন আসে এবং দ্রুত গতিতে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। সবকিছু ঘড়ির কাঁটার মতো নিয়মিত। উন্নত বিশ্বের শহরগুলোর মতো যাতায়াতের সুবিধা এখন মিরপুরবাসী সবচেয়ে বেশি উপভোগ করছেন। সড়কেও যাত্রীদের চাপ কমেছে।

তবে শুধু যাতায়াতই নয়, মেট্রোরেল মিরপুরের ব্যবসা-বাণিজ্যেরও উন্নতি ঘটিয়েছে। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে মিরপুরবাসীদের “স্যার” বলে সম্বোধন করা হয়। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল লাইনটি আসলে উত্তরায় অবস্থিত, তবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে মিরপুর।

আগারগাঁও থেকে পল্লবী পর্যন্ত স্টেশনের সংখ্যা মাত্র ১২টি এবং সময় লাগে মাত্র ১২ মিনিট। পূর্বে পল্লবী থেকে মিরপুর ১০ আসতে প্রায় অর্ধ ঘণ্টা সময় লাগত। কিন্তু এখন মিরপুর কাবাব, বিরিয়ানি ও অন্যান্য মুখরোচক খাবারের জন্য বিখ্যাত। এখন সেসব দোকানে লাইন ধরে খাবার খাওয়া যায়। মিরপুরে সস্তায় বাড়ি ভাড়া পাওয়ার চিন্তা এখন আর করতে হয় না। মেট্রো চালু হওয়ার পর থেকে আবাসিক ভবন ও দোকানের ভাড়া বেড়ে গেছে। মিরপুর জুড়ে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ভবন, শপিংমল, রেস্তোরাঁ ও উৎসব ভবন। এখন মিরপুরে সবকিছুই আছে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, পার্ক, চিড়িয়াখানা, স্টেডিয়াম, বড় শপিংমল ও সিনেপ্লেক্স। ঢাকার আর কোথাও এত কিছু একসঙ্গে নেই।

মিরপুরের জনবসতির ইতিহাস প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো। ১৬১০ সালে ঢাকা প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই মিরপুরে মানুষ বসবাস শুরু করে। তখন তুরাগ নদীর পাশে একটি ছোট্ট গ্রাম ছিল মিরপুর। ঢাকা যাতায়াতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাট ছিল। দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এই ঘাটে নামতেন। মোগল আমলে অভিজাত ব্যক্তিদের “খান” উপাধি দেওয়া হত। ঢাকায় আসা ব্যক্তিদের “খান” থেকে “মিরপুর” ধারণাটি এসেছে।

আরও পড়ুনঃ  কারিগরি ত্রুটিতে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তবে তখন যাতায়াত সহজ ছিল না। পাকা রাস্তা ছিল না। বর্তমান মিরপুর রোড ধরেই চলাচল করতে হত। ঘোড়ায় চড়ে বা পালকিতে করে যাতায়াত করা হত। আজকের মিরপুর শাহ আলী মাজারে ইসলাম প্রচারের জন্য আসা ৪০ শতকের একজন ছিলেন এরশাদ। তিনি মিরপুরে ঘর বানিয়েছিলেন। ১৮৯৩ সালে তাঁর ঘর থেকে অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসে। ঢুকে দেখা যায়, তাঁর বসার জায়গাটি ঠিক নেই। তাঁর হদিস আর মেলেনি। সেই জায়গাতেই ঘর বানানো হয়। ১৮০৬ সালে ঢাকার নাজিমখান বাজার করেন। ধীরে ধীরে কথা ছড়িয়ে পড়ে এবং বসতি বাড়তে থাকে।

পাকিস্তান আমলে সেখানে বিহারীদের জন্য একটি বড় শহর করার পরিকল্পনা করা হয়। তখনই সেক্টর ভাগ করা হয়। এলাকাটির পরিকল্পনা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে গত কয়েক বছরে মিরপুর অনেক বড় হয়েছে। মিরপুর একসময় পৌরসভা ছিল দুটি। এখন থানার সংখ্যা পাঁচটি। ২০২২ সালের আদমশুমারিতে জনসংখ্যা লাখেরও বেশি উঠে এসেছে। এখন তা আরও বেড়েছে। ঘুরে বেড়ানোর জন্য এটি একটি দারুণ জায়গা।

১৯৬২ সালে এখানে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান করা হয়। ১৯৭৪ সালে করা হয় জাতীয় চিড়িয়াখানা। ২০০৬ সালে শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম উদ্বোধনের পর থেকে বিদেশেও এলাকাটির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে।দ্যান করা হয়। ১৯৭৪ সালে করা হয় জাতীয় চিড়িয়াখানা। ২০০৬ সালে শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম উদ্বোধনের পর থেকে এলাকাটির বিদেশেও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে।

মো: নূরে আলম, শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *