প্রতিক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ামতামত

সন্ত্রাসবাদে পিছিয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ

শান্তি জিনিসটা একটি দেশের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সন্ত্রাসবাদের তালিকায় বারবার শীর্ষে থাকা যে কতটুকু শঙ্কার তা বলে বোঝানো দায়। প্রতি বছর সুখী দেশের তালিকায় পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। বিপরীতে সন্ত্রাসবাদসহ অন্য সব আন্তর্জাতিক সূচকে থাকে এগিয়ে। কেন সন্ত্রাসী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম প্রথম তিন ডজনে থাকবে? সেটি আজ আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে দাঁড়িয়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে ( জিটিআই) এবার বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫ তম। যা ২০২৪ সালে তিন ধাপ সামনে ছিলো। ৩২ তম স্থানের পর এবার তিন ধাপ পিছিয়ে ৩৫ তম অবস্থানে রয়েছি আমরা।

চলতি বছরের ৫ মার্চ প্রকাশিত সূচকটি দেখে, সন্ত্রাসবাদ কমেছে এটি বলার চেয়ে না বলাই উত্তম। তার কারণ- নির্মূল হয়নি সন্ত্রাসবাদ, টানা হচ্ছে না প্রয়োজনীয় লাগাম। অনিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম এই অবস্থানের জন্য দায়ী- সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

২০১২ সাল থেকে বিশ্বের সন্ত্রাসী দেশের সূচক প্রকাশ করে আসছে, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি)। তাদের প্রকাশিত এই সূচকে কোনো দেশের মান ০ হলে সেই দেশে সন্ত্রাসবাদের প্রভাব নেই বলে ধরে নেওয়া হয়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ০ থেকে ১০ স্কোরের এই যাচাই সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ৩ দশমিক ০৩ স্কোর। প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের ১০০টি দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ভয়ের বিষয় হচ্ছে, এই তালিকায় প্রায় ৬৫ দেশকে পেছনে ফেলে সন্ত্রাসবাদে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

পুরো বিশ্বে গত এক বছরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা, হামলায় নিহত কিংবা আহত ও সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মির পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের এই সূচক তৈরি করে ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস।

এবার আসা যাক,কেন সন্ত্রাসবাদে এগিয়ে বাংলাদেশ- এই প্রশ্নের জবাবে। বাংলাদেশে দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় যাবৎ ফ্যাসীবাদী আগ্রাসন চলেছে। গুম, খুন, হত্যার শিকার হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। জেল, জুলুম ও মামলার শিকার হয়ে অতিষ্ঠ ছিলেন কয়েক মিলিয়ন মানুষ। সেসবের কারণেই সন্ত্রাসবাদ সূচকে ৬৫ দেশকে পেছনে ফেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। শুধু ফ্যাসীবাদী আমল নয়,পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও থামেনি চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যা।

আরও পড়ুনঃ  রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে নির্বাচন অভিমুখী বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার মতো একটি দেশেও বাংলাদেশের মতো ফ্যাসীবাদের পতন হয়েছিল। সেই দেশ এবার সন্ত্রাসবাদ সূচকে ঠাঁই পায়নি। সোজা বাংলায় বললে, সেখানে সন্ত্রাসবাদ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশ থেকে বছর ছোঁয়া সময় পেরিয়ে যেতে শুরু করলেও বিলুপ্ত হয়নি সন্ত্রাসবাদ।

দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই সরকারের আমলে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় আনোয়ার হোসেন নামে এক স্বর্ণ-ব্যবসায়ীকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তখন তার কাছে থাকা প্রায় ২০০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

এছাড়া, গত তেসরা মার্চ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ঘটে বর্বরোচিত আরেকটি ঘটনা। যা দেশব্যাপী আর দশটা ঘটনার মতোই দিয়েছে আলোচনার জন্ম। ওইদিন রাতে জেলাটির সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় মসজিদের মাইকে ডাকাত এসেছে ঘোষণা দিয়ে মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ ছালেক নামে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই ঘটনায় স্থানীয় এক দোকানিসহ চার ব্যক্তি গুলিবিদ্ধও হয়েছেন।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, যেন মানুষজন আইনশৃঙ্খলার থোড়াই কেয়ার করছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়া আচরণও ইতোমধ্যে মিডিয়া ট্রায়ালে এসেছে। অমানবিক নির্যাতনের পর এ বছরের ৩১ শে জানুয়ারি যৌথ বাহিনীর হেফাজতে মারা যান কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউপির বাসিন্দা ও যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম।

এসব ঘটনা একের পর এক ঘটলেও প্রয়োজনীয় টনক নড়েনি রাষ্ট্র সংশ্লিষ্টদের। যার দরুণ বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে আমরা তেমন একটা উন্নতি ঘটাতে পারিনি। এ দায় নিয়ে বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্টদের জনগণের মুখোমুখি হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ দমনে আরো বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো- অপারেশন ডেভিল হান্টসহ বাকিসব উদ্যোগকে জনগণ আইওয়াশ আর ভেলকিবাজি ভেবে দেশে আরও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কিছুই করার থাকবে না।

আরও পড়ুনঃ  ধর্ষণ প্রসঙ্গঃ আইনের ছাত্র হয়ে কিভাবে চুপ থাকি

লেখক-
জিহাদ হোসেন রাহাত
শিক্ষার্থী,
মিডিয়া অ্যান্ড জার্নালিজম।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button