এস এম সাইফুল ইসলাম, দেশের জনপ্রিয় তরুণ ওয়ায়েজ, খতমে নবুুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক ও বনানীর কড়াইল আদর্শ নগর কবরস্থান জামে মসজিদের খতিব মুফতী উবাইদুর রহমান হুযাইফীর পিতা শাইখুল হাদীস মাওলানা মুফিজুল ইসলাম (৫৯) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। (বাদ জোহর কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর ধর্মশুর হামীদিয়া মাদ্রাসায় জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে)।
গতকাল (১৫ মার্চ) শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ইফতারের পূর্ব মুহুর্তে রাজধানী বেসরকারি হাসপাতাল শ্যামলী সিকেডিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন মাওলানা উবায়দুর রহমান হুজাইফি নিজেই। তিনি বলেন, আমার পিতা শাইখুল হাদীস মাওলানা মুফিজুল ইসলাম (রহ.) দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এ পর্যন্ত দেশ ও দেশের বাহিরে অনেক স্বনামধন্য হাসপাতালে পিতাকে নিয়ে দৌড়েছি। আমার তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও আজ পিতা আল্লাহর জিম্মায়। আমার পিতা ঠিক সাহরির সময় এই দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করেন।
এর আগে গত (১৪ মার্চ) মাওলানা হুজাইফি তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে পিতার অসুস্থতার বিষয়ে লিখেন, "আব্বুর অবস্থা অনেকে জানতে চাচ্ছেন: যেই কিডনি প্রতিস্থাপন সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ লাখ খরচ করে লাগিয়ে এনেছিলাম সেই নতুন কিডনিটাও নষ্ট হয়ে গেছে। কিডনি প্রতিস্থাপনের পর পাওয়ারফুল ওষুধ দেওয়া হয়, যার ফলে লিভারও ৭০% নষ্ট হয়ে গেছে। মলত্যাগ প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে বন্ধ। ৫ দিন ধরে বেহুশ। আপাতত আইসিউতে। প্রতিদিন ৫০ হাজারের কাছাকাছি খরচ যাচ্ছে। তিনি লিখেন, "সব মিলিয়ে ফয়সালা এখন আল্লাহর হাতে। আপনারা জুমা'র পর একটু দুয়া করবেন এটাই অনুরোধ রইলো"।
গতকাল (১৫ মার্চ) মাওলানা হুজাইফি পিতা লাইফ সাপোর্টে আছেন মর্মে একটি পোস্ট করেন। এর কয়েকঘন্টা পরই পিতা আর নেই বলে জানান তিনি। পিতার মৃত্যুর কয়েকটা ঘন্টা পর সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করে তিনি লিখেন, "কত সুন্দর মৃত্যু আমার কলিজার টুকরো পিতার। শহীদ (আমার পিতা) মুফতী মুফীজুল ইসলাম রহমাতুল্লাহি আলাইহ"।
তিনি লিখেন, "আব্বু মুনাজাতে এই চারটি দুয়া সব সময়ই করতেন। ১| আল্লাহ, আমাকে রমজান মাসে মৃত্যু দিও। ২| আল্লাহ, আমাকে রমজানের শুক্রবার মৃত্যু দিও। ৩| আল্লাহ, আমাকে রমজান মাসের শুক্রবার ইফতারির আগ মুহূর্তে মৃত্যু দিও। ৪| আল্লাহ, আমাকে তুমি শহীদি মরণ দিও। সহীহ বুখারীর হাদীস, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (ঈমান অবস্থায়) কেউ পেটের পীড়ায় মারা গেলে সে শহীদ।"
তিনি আরও লিখেন, "সবাই-ই আশ্চর্য, পিতার দুয়া কবুলের জ্বলন্ত দৃষ্টান্তের সাক্ষী যেন উপস্থিত সকলেই হয়ে গেলো। পরিশেষে বলবো, নিজের পিতা বলে বলছি না, বাস্তবতা বলছি, এমন ব্যক্তির জানাযায় উপস্থিত হওয়াটা সৌভাগ্য ছাড়া দূর্ভাগ্য হবে না ইনশা আল্লাহ। আপনারা চাইলে উপস্থিত হতে পারেন। যদি একান্ত উপস্থিত হতে না-ই পারেন তবে বলবো, আপনি যদি আমাকে একজন মুসলমান ভাই হিসেবেও নূন্যতম ভালোবেসে থাকেন, আমার পিতার জন্য এক বার সূরা ফাতেহা, তিন বার সূরা ইখলাস পাঠ করবেন"।
উল্লেখ্য: বার্ধক্যজনিত নানান অসুস্থতা, ডায়বেটিস ও হাই প্রেশারের কারণে উভয় কিডনি ড্যামেজ হয়ে যাওয়ায় গত (২৫ আগস্ট) শুক্রবার বিকেল মাওলানা মুফিজুল ইসলাম (রহ.)কে ভারতের রাজস্থানের মনিপাল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়৷ সেখানে দীর্ঘ সময়ের অপারেশন এর মাধ্যমে উভয় কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে কিছুটা সুস্থ হলেও দেশে ফেরার পর পুনরায় প্রতিস্থাপনকৃত একটি কিডনি আবারও ড্যামেজ হয়ে যায়। এরপর আবারও হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে গতকাল লাইফ সাপোর্টে ইন্তেকাল করেন তিনি।