শিক্ষককে হত্যার পর টাকা লুট, ‘সমকামিতা’র নাটক সাজিয়ে চিরকুট
সাভারে ভাটপাড়া গোলাম কিবরিয়া (৪৩) নামের এক শিক্ষককে হত্যার পর চিরকুট লিখে রাখার ঘটনায় রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করেছে র্যাব। সোমবার (২১ আগস্ট) রাতে র্যাব-৪, ৬ ও ১৩ যৌথ অভিযান চালিয়ে যশোর, ঝিনাইদহ ও রংপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো মূল পরিকল্পনাকারী মো. ইমন খান (২৩), মো. সাগর (২২) ও মো. ছাদেক গাজীকে (২২) গ্রেফতার করেছে। এ সময় লুট করা ৫ লাখ ২১ হাজার ৯৯ টাকা উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২০ আগস্ট বেলা ৩টার দিকে সাভার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কক্ষ থেকে হাত-পা বাঁধা এবং গলায় গামছা পেঁছানো অবস্থায় গোলাম কিবরিয়া (৪৩) নামে সাবেক এক স্কুলশিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় মরদেহের পাশ থেকে ‘এই ব্যক্তি সমকামিতা করে পুলিশ ভাই, আমরা তাই মেরে ফেলেছি। ভাই, ও অবৈধ কাজ করে…আমরা ইসলামের সৈনিক’ লেখা একটি চিরকুট পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে সাভার থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে র্যাব বলছে, নিহত গোলাম কিবরিয়া কয়েক বছর ধরে নিজ বাড়িতে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। পাশাপাশি জমি বেচাকেনার ব্যবসা করতেন। এ কারণে তার কাছে সব সময় মোটা অঙ্কের টাকা থাকতো। গত ১৯ আগস্ট রাত ১০টার দিকে তার বড় ভাই মো. গোলাম মোস্তফার ঘরে রাতের খাবার শেষে নিজ কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘটনার দিন ২০ আগস্ট বেলা ২টার দিকে কিবরিয়া ঘুম থেকে না ওঠায় তার বাড়ির লোকজন তাকে ডাকাডাকি করে। বাড়ির লোকজন ঘরের ভেতর থেকে কোন সাড়া না পেয়ে এক পর্যায়ে তার ঘরের পেছনের দরজা খোলা দেখতে পায়।
এ সময় বাড়ির লোকজন রুমের ভেতর গিয়ে খাটের ওপর লুঙ্গি দিয়ে নিহত শিক্ষকের হাত-পা বাঁধা ও গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় নিথর মৃতদেহ দেখতে পায়। এ ছাড়া নিহতের কক্ষের মালামাল এলোমেলো ও আলমারি খোলা অবস্থায় ছিল। এ সময় পাশে ওই চিরকুট পাওয়া যায়।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব মুখপাত্র বলেন, ইমনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। সাগর একজন অটোরিকশাচালক। তার রিকশায় নিহত শিক্ষক মাঝেমধ্যে যাতায়াত করার কারণে দুই বছর আগে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে ছয় মাস আগে সাগর তার বন্ধু ইমনকে শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরিচয়ের সুবাধে ইমন ও সাগর শিক্ষক কিবরিয়ার বাসায় মাঝেমধ্যে যাওয়া আসা করতো।
তিনি আরও বলেন, সাগর ও ইমন শিক্ষকের বাসায় যাওয়া আসার সুবাধে শিক্ষকের টাকাপয়সা তাদের নজরে আসে। পরে তারা শিক্ষককে হত্যা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। ইমন তার পরিকল্পনার বিষয়টি ঘটনার সাত থেকে থেকে দিন আগে ছাদেককে বলে। ছাদেকের বিভিন্ন জায়গায় ঋণ থাকায় সে এই পরিকল্পনায় সম্মতি দেয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ছাদেক নিজ হাতে একটি সাদা কাগজে চিরকুট লিখে মৃত দেহের পাশে রেখে দেয়। ইমন নিহতের বিছানার নিচ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, চারটি মোবাইল নিয়ে যায়।
কমান্ডার মঈন আরও বলেন, ইমন সাগরকে ৫০ হাজার টাকা দেয়। বাকি ৬ লাখ টাকা ইমন ও ছাদেক নিজেদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে নেয়। ঘটনার পর দিন সকালে গ্রেফতার এড়াতে ইমন প্রথমে গাজীপুর পরে যশোরের চৌগাছা এলাকায়, সাগর রংপুরের মিঠাপুকুর, ছাদেক ঝিনাইদহে তাদের আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করে। অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব।
[wpforms id=”1098″ title=”true”]