পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বন্যা অন্যতম। তীব্র বৃষ্টির কারণে প্রায়ই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। বন্যার ফলে মানুষের সাধারণ জীবন দুর্বিষহ হয়। বন্যায় আক্রান্ত এলাকার মানুষেরা পানিবন্দি হয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করে।
বিশেষ করে পাহাড়ি ও নিচু অঞ্চলের মানুষেরা বন্যায় আক্রান্ত হয়। এ সময় অসংখ্য বানভাসি মানুষ খাদ্য-চিকিৎসা ও আশ্রয়ের অভাবে দুর্ভোগে দিন পার করে। এসব ক্ষেত্রে একজন মুসলিমের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা।
কেননা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন মেটাবেন।
একইভাবে যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিনে তার বিপদ দূর করে দেবেন। ’ (আবু দাউদ : ৪৮৯৩)।
শুধু তা-ই নয়, অন্যের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ালে আল্লাহও খুশি হন। এটি সওয়াবের কাজ।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যতক্ষণ একজন মানুষ অন্য কোনো মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে ততক্ষণ আল্লাহ তার কল্যাণে রত থাকবেন। (সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব : ৬৯)।
এমনকি বন্যার পানিতে আবদ্ধ হয়ে অনেকে অনাহারে দিন কাটান। দরিদ্ররা অর্থের অভাবে ঠিকমতো খাবার কিনতে ও খেতে পারেন না। এক্ষেত্রে সামর্থ্যবানদের কর্তব্য হচ্ছে- অভুক্তদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করা।
সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ যেমন উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে, অনুরূপ সমস্যায় পতিত মানুষদের জন্যও ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা। আর আল্লাহকে ভালোবেসে এসব কাজ করতে হবে।
আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসার কারণে মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে খাবার খাওয়ান। ’ (সুরা আল-দাহর : ৮)। এ সময় বন্যা কবলিত এলাকায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা অবশ্য কর্তব্য।
এর প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর। ’ (সহিহ বুখারি : ৫৬৪৯)।
বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে গিয়ে অনেকে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা অনাথ ও স্বামীহারা তথা বিধবা। অর্থাভাবে ঘর মেরামত কিংবা পুনরায় নির্মাণের সামর্থ্য রাখে না। বন্যা-পরবর্তী তাদের জন্য উত্তম বাসস্থানের ব্যবস্থা করা মানবিক দায়িত্ব।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এতিম ও অনাথের লালন-পালন করে সে আমার সঙ্গে পাশাপাশি জান্নাতে থাকবে। এ কথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুলদ্বয় মিলিয়ে ইঙ্গিত করে দেখালেন। ’ (সহিহ বুখারি : ৬০০৫)।
তাই সমাজের ধনী ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের এমন মানবিক কাজে সহায়তার উদ্দেশে কোরআনে কারিমে আছে- যারা আল্লাহর রাস্তায় তাদের সম্পদ খরচ করে তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে আর প্রতিটি শীষে রয়েছে ১০০টি করে দানা। (সুরা বাকারা : ২৬১)।
আর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তার প্রতি রহম করেন না, যে মানুষের প্রতি রহম করে না। ’ (সহিহ বুখারি : ৭৩৭৬)।
তবে এসব কাজের উদ্দেশ্য হতে হবে একমাত্র রবের সন্তুষ্টির জন্য। ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য তথা লোক দেখানো কিংবা খ্যাতি অর্জনের জন্য নয়। যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনকারী বান্দা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
আল্লাহ বলেন, ‘কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদের আহার্য দান করি, আমরা তোমাদের কাছ থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়। ’ (সুরা আল দাহর : ৯)।
আসুন আমরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই, তাদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করি এবং তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। সর্বোপরি, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের পাশে অবস্থান করা সবার সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। মহান আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।