নড়াইল সদরের দুর্গাপুর গ্রামের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরিকুল ইসলাম তারেক। জন্মগতভাবে দুই হাতে মোট চারটি আঙ্গুল। পায়ে চলার সক্ষমতা নেই ।হাত ও পায়ের চরম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আঠাশ বছর ধরে দলিল লিখে জীবিকা নির্বাহ করছেন । হাতের দুই আঙ্গুলে দলিল লিখে ১০ জনের সংসারে হাল ধরে রেখেছেন ।লেখা পড়া করে চাকরির জন্য ঘুরলেও তা পূরণ হয়নি ।বৃথা চেষ্টা বাদ দিয়ে ১৯৯৬ সালে নেমে পড়েন দলিল লেখার কাজে। হাতের দুইটি আঙ্গুল দিয়েই নিপুন হাতের লেখায় করে যাচ্ছেন দলিল লেখার মত কঠিন কাজ কোন আক্ষেপ নেই তার।
তরিকুল ইসলাম তারেক; আমি ১৯৯৬ সালের ৩০শে জানুয়ারি থেকে এই কাজে লিপ্ত হয়েছি। লিপ্ত হওয়ার পূর্বে আমি লেখাপড়ার জীবন শেষ করে বহুবার চাকরির জন্য এপ্লাই করেছি । এমনকি ১৯৯৫ সালে আমি শিক্ষামন্ত্রীর ওখানেও গিয়েছিলাম । তাতে কোন কাজ হয় নাই । না হওয়ার পর ১৯৯৬ সালে এসে ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছি। এখন আমি যেভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবহার আচরণ ভালো করি, তাদের সঙ্গে কথা দিয়ে আন্তরিকতা দিয়ে তাদেরকে নিয়ে আসি । আন্তরিকতার সাথে তাদের সাথে কথা বলি,এভাবেই তারা আসে ।আমাদের কাজটা তো মূলত কথার পরে আসে তাদের কাছে আমরা কথাবার্তা বলে যেভাবে হোক আসে মানুষ আমাদের কাছে। আর হয়তো অনেকে সহানুভূতি দেখায় "প্রতিবন্ধী লোক"। এভাবে এসে কাজ কাম করায়। আমরা প্রতিবন্ধীরা চাই সমাজের বোঝা না হয়ে সমাজে কর্ম করে খাই আমি চাই আমার মত সমস্ত প্রতিবন্ধী কর্ম করে খাক"
পঙ্গু দশা নিয়ে প্রতিদিন নিয়মিত হাজির হন সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। এভাবে চলছে টানা ২৮ বছর। নিজের শারীরিক অক্ষমতা ঢেকে রেখে অন্য সুস্থ লেখকের চেয়েও নিপুন হাতে সম্পাদনা করে যাচ্ছেন জমির দলিল ।
প্রথম ব্যক্তি- সে নিজে অনেক কষ্ট করে তার সাত-আটজন পরিবারের সদস্য নিয়ে সংসার চালায়। ভবিষ্যতে আরো আল্লাহ পাক শক্তি দিক যে, সে দলিল লিখে তার পরিবার পরিজনদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
২য় জন- আমাদের দলিল লেখক সরকারি সনদপ্রাপ্ত। সে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত আমাদের দলিল লেখক পেশায় জড়িত ।বর্তমানে কম্পিউটারে দলিল লেখা গেলেও সে হাতে অনেক কষ্টে দলিল লিখে আসছে।
৩য়জন- দেখে তারেক ভাইকে ভালো লাগে। গর্ববোধ করি যে সে একটা ব্রিলিয়ান্ট লোক ।ভালো লাগে তারে।
দলিল লেখার কাজ শেষে বিকেলে বাড়ির কাছে ছোট্ট মুদি দোকানে বসে বেচা কেনা করেন। তার আয় দিয়েই চলে ১০ জনের সংসার। পরিবারের লোকেরাও কৃতজ্ঞ ,শারীরিক অক্ষমতা'কে ঢেকে নিরলস পরিশ্রম করে যাওয়া এই মানুষটির প্রতি।